Tuesday 15 August 2017

প্রতিযোগিতা

logo
হোম  আজকের পত্রিকাআইন-আদালত এবার গ্রামমুখী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি সরকারের

এবার গ্রামমুখী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি সরকারের
শুরু হচ্ছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিযোগিতা

আশরাফুল হক রাজীব    ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ০০:০০ Shareশেয়ার মন্তব্য()প্রিন্ট

অ- অ অ+
সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিল্পীদের খুঁজে বের করার জন্য প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে 'উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা'। দেশজ সংস্কৃতির বিকাশের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিল্পী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। শহরের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রকাশ করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম গত রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ প্রতিযোগিতা শেষ করা হবে। প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হবে এ ধরনের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় দুটি কাজ হবে। একদিকে তৃণমূলের শিল্পীদের খুঁজে বের করা হবে; অপরদিকে প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সাংস্কৃতিক উৎসব হবে। তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শহরবন্দি হয়ে আছে। শহরে বিশেষ করে রাজধানীতে বসবাসকারী মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধা পেঁৗছালেও বঞ্চিত হচ্ছে সারা দেশের মানুষ। সরকারের নয়া উদ্যোগে কিছুটা হলেও সেই বঞ্চনা ঘুচবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তৃণমূল পর্যায়ের এই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার জন্য সাধারণ ও অর্থিক নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৪৮৩টি উপজেলায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। প্রতিটি উপজেলার পাঁচটি সুবিধাজনক স্থানে প্রতিযোগিতা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে হবে অনুষ্ঠান। যেখানে এ ধরনের মিলনায়তন থাকবে না সেখানে সুবিধাজনক স্থানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে। প্রতিযোগিতা তদারক করার জন্য স্থানীয়ভাবে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে একটি উপদেষ্টা পরিষদ এবং একটি কার্যকরী পরিষদ থাকবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা থাকবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন কার্যকরী পরিষদের আহ্বায়ক। স্থানীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কার্যকরী পরিষদ গঠন করা হবে। জানা গেছে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করা হবে। অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে নৃত্য, সংগীত, নাটক, ক্রীড়া, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন। এসব বিষয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তুলে ধরা হবে। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ছবি, ভিডিও ফুটেজ, পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা শিল্পকলা একাডেমীতে পাঠাতে হবে। জানা গেছে, প্রতিযোগিতার আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলার বাজেট ৮০ হাজার টাকা। ৪৮৩টি উপজেলার জন্য মোট বরাদ্দ তিন কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিযোগিতার আয়োজন নিশ্চিত করবেন। এ বছর ২০ জুনের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করে সব তথ্য শিল্পকলা একাডেমীতে পাঠাতে হবে। অর্থ খরচের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১০ বছর জাতীয় বাজেটে সাংস্কৃতিক খাত ছিল অবহেলিত। বাজেটের অভাবে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন তো দূরের কথা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ১৪টি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে নেওয়াই কষ্টকর ছিল। একই কারণে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় যাত্রাপালা, লাঠিখেলা, পতুল নাচ, নৌকাবাইচ, মেলাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। মোট কথা, দেশের সংস্কৃতির বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের মতে, সারা দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের যেসব কর্মসূচি যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়া, শিক্ষা ও নারী নীতি বাস্তবায়ন করতে হলেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটানো জরুরি। একজন কর্মকর্তা বলেন, সংস্কৃতিচর্চার জন্য উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো নিয়মিত নয়। নাটক, সিনেমা, সংগীত, নৃত্য বা চিত্রকলার চর্চায় সরকারের প্রধান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমী। জেলা পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানটির অফিস থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। একই সঙ্গে অর্থ ও অকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় শিল্পকলা একাডেমী জেলা পর্যায়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ওই কর্মকর্তার মতে, সারা দেশে সাংস্কৃতিকবলয় তৈরি করার জন্য এক বা দুই দফা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের চেয়ে শিল্পকলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, নজরুল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কার্যকর করা বেশি জরুরি।।

No comments:
Write comments